বিশেষ প্রতিনিধি, মোঃ মনির।।

আফজাল হোসেন জয়।

বান্দরবান।

বান্দরবানের লামার সরই ইউনিয়নে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ এর রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরী নির্মানে উদ্যোগ, স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে পারে কোয়ান্টম কসমো স্কুলের শিক্ষার্থীরা, এমনটা ধারনা করছে সচেতন মহল।

এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ২০০১ খ্রিস্টাব্দে দূর্গম পাহাড়ে সুবিধা বঞ্চিত অসহায় ও এতিম শিশুদের জন্যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল সবুজ প্রকৃতির পাহাড়ী জনপদে এই পিছিয়ে পড়া সুবিধা বঞ্চিত সকল শ্রেনী  শিশুদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তারি ধারাবাহিকতায় দিন মাস বছর, যুগের পর যুগ পেরিয় বর্তমানে প্রায় ৩০০০ শিক্ষার্থীর একাডেমিক শিক্ষা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা চিকিৎসা পোশাক আহার ও আবাসন সহ সকল প্রকার শিক্ষা সামগ্রী ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে আসছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

সময়ের সাথে সাথে দিন বদলের প্রবল মানষিকতা নিয়ে এগিয়ে চলা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দেশের সেরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর স্থান দখল করে নিয়েছে, যার পিছনে রয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এর স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা, কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ এক কথায় বলতে গেলে সাধনা।

কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের ৩ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ও লেখাপড়ার পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে:

যেখানে রাবার ফ্যাক্টরি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে সেটার নিকটবর্তী কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের সুবৃহৎ ৩টি আবাসিক ক্যাম্পাস। যেখানে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। রাবার ফ্যাক্টরির কাজ শুরু হলে শব্দ দূষণ বাড়বে এবং তার চেয়েও বড় সমস্যা দেখা দিবে রাবার প্রসেসিং এর দুর্গন্ধ, যা চার পাশের পরিবেশকে অস্বস্তিকর করে তুলবে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ শতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসটি কারণ এটি নির্মাণাধীন ফ্যাক্টরির ১৬০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত। রাবারের দুর্গন্ধ ও মেশিনের উচ্চ শব্দের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে এই মেয়ে শিশু কিশোরীরা। তাদের লেখাপড়া খেলাধুলা ও দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিবেশগত একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিঘ্ন ঘটবে শতাধিক জিমন্যাস্টের নিয়মিত অনুশীলন:

রাবার ফ্যাক্টরির ১৮০ মিটার দূরে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় ও আন্তর্জাতিক মানের জিমনেসিয়াম। যেখানে প্রতিদিন শতাধিক জিমন্যাস্ট অনুশীলন করে।

এখানে উল্লেখ যে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের জিমন্যাস্টিকস দলই বর্তমানে জাতীয় জিমন্যাস্টিকস দলকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক জয় করে আনছে। গত২০২১ সালে দিকে সিঙ্গাপুর ওপেন জিমন্যাস্টিকসে বাংলাদেশের অর্জনকৃত ২৫টি পদকের ২১টি ই অর্জন করে এ স্কুলের জিমন্যাস্টরা। আর এই অর্জনের আঁতুড়ঘর হচ্ছে এই জিমনেসিয়াম।

এখানে একটি বিষয় বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, কোয়ান্টাম ফাইন্ডেশন কিন্তু রাবার ফ্যাক্টরি নির্মাণের বিরোধিতা করছে না। তারা চাইছে শিশু কিশোরদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা,নিরাপদ আবাসন কারণ তারা এসব সুবিধা বঞ্চিত ও এতিম শিশুদের দায়িত্ব নিয়েছেন। আন্ধারী খালের উৎপত্তি স্থলে রাবার ফ্যাক্টরি হলে এ শিশু কিশোররা দূর্গন্ধ ধোঁয়া ও শব্দ দূষণের শিকার হবে, ঝুকিতে পড়বে এসব শিশু কিশোরদের জীবন যাপন কারন এখানে দেখাদি্ে পরিবেশ বিপর্যয়, মারাত্বক ভাবে বেড়ে যাবে স্বাস্থ্য ঝুকি। কোয়ান্টাম তাদের দায়িত্ব বোধ থেকে চাচ্ছেন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ এর অনেক জায়গা আছে, যেখানে সাধারন মানুষের অবস্থান নেই সেখানে ফ্যাক্টরি নির্মাণ হউক তাতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু যে সব অসহায় সুবিধা বঞ্চিত এতিম শিশু কিশোরদের উজ্জল ভবিষ্যত তথা এদেশের আদর্শ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলছে এই প্রতষ্ঠান, তারা যেনো কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এই কিশোরদের স্বপ্নের পথ যেনো হয় মসৃণ।

কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নূর হোসেন বলেন, কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় ও এতিম শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ যেনো রাবার বাগানের রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরী অন্যত্র স্থাপন করেন, সেটা হতে পারে জনহীন জায়গায়, যেখানে স্থাপন করলে স্কুলের শিক্ষার্থী সহ পরিবেশে কোনো ক্ষতি না হয়। মানব জীবনে যেনো বিরূপ প্রভাব এর সৃষ্টি না হয়।

এবিষয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম এর সাথে, তিনি বলেন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ, আমাদের কাছে একটি আবেদন করেছেন, আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি, সব কিছু বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।