বিশেষ প্রতিনিধি, মোঃ মনির।।
মোঃ মনিরহোসেন ://
৫ জুন থেকে শুরু হয় ঈদুল আজহার ছুটি, যার শেষ দিন আজ (শনিবার) ১৪ জুন। দীর্ঘ এই ছুটিতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে নিজ নিজ বাড়ির পথে যাত্রা করে রাজধানীর কর্মজীবী মানুষেরা। ছুটি কাটাতে মূলত ৫ জুন থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেও কেউ কেউ এর আগেই নিজ গন্তব্যে যাত্রা করেন। সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান পথে গন্তব্যে রওনা হন রাজধানীর বাসিন্দারা।
সড়কপথে ছুটি শুরুর আগের দিকে যাত্রা স্বস্তির হলেও দিন পার হওয়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে নানা ধরনের ভোগান্তি। এরমধ্যে বাসের টিকিট না পাওয়া, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট উল্লেখযোগ্য। এসব কারণেই ঘরমুখো মানুষের স্বস্তির যাত্রা পরিণত হয় ভোগান্তিতে। আনন্দের ঈদযাত্রা অনেকের জন্যই ছিল ভোগান্তিতে ম্রিয়মাণ।
শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং যাত্রাবাড়ী এলাকা সরেজমিনে ঘুরে জানা যায় ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তির কথা।
গাবতলী বাস টার্মিনালে রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার ঢাকায় আসার কথা ছিল সকাল ৬টায়। রাত ৯টার বাসে উঠেছিলাম। সময় বেশি ধরেই ভেবেছিলাম সকাল ৬টায় পৌঁছাবো। কিন্তু এসে পৌঁছালাম দুপুর আড়াইটায়। ভয়াবহ জ্যাম ছিল। যমুনা সেতু, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, এলেংগা মূলত এই চারটা জায়গায় জ্যাম থাকার কারণে এতো সময় লেগেছে। যাওয়ার সময়ও একই ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। তখন সময় আরও বেশি লেগেছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টার কাছাকাছি।
মো. মাসুম মিয়া চাকরি করেন একটি পোশাকের শো রুমে। বাড়ি তার গাইবান্ধা। তিনি বলেন, আমি বাড়ি গিয়েছি ঈদের পরেরদিন। তখন গাবতলী থেকে বাসে উঠেছিলাম দুপুর ২টায়। বাড়ি গিয়ে পৌঁছেছি সন্ধ্যা ৬টায়। আর আসার জন্য গতকাল বাসে উঠেছি রাত সাড়ে ১০টায়। আর আসলাম বিকাল তিনটায়। এই হচ্ছে ভোগান্তির অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় জ্যামে পড়তে হয়েছে। কিন্তু যমুনা সেতুতে সবচেয়ে বেশি। ওখানেই মনে হয় ৪/৫ ঘণ্টা চলে গিয়েছে।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাইব হাসান এসেছেন দিনাজপুর থেকে। তিনি জানান, তার অফিস শুরু হবে সোমবার থেকে। একদিন হাতে সময় রেখেই এসেছেন কর্মস্থলে। তিনিও যাত্রাপথে ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, আগেও বাড়িতে যেতাম কিন্তু এরকম ভোগান্তি হতো না যমুনা সেতুতে, এবার যেরকম হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে আমার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু আসলাম সাড়ে ১২টায়। যমুনা সেতুর টোল প্লাজায় ৪/৫ ঘণ্টা করে অতিরিক্ত সময় লাগছে। সরকারের এদিকে নজর দেওয়া উচিত। তাহলে আমাদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না।
মিরপুরের একটি হোস্টেলের কর্মচারী আরিফ হোসেন। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসেছে নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে। তিনি বলেন, নিয়মিত যাতায়াত করা গণপরিবহনের টিকেট পাইনি। পরে একটা লোকাল বাসে করে এসেছি। রাস্তায় যানজট না থাকলেও বাস পেতে সময় লেগেছে।
অন্তরা পরিবহনে পটুয়াখালী থেকে ঢাকা এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই আসতে হয়েছে। ৬০০ টাকার ভাড়া ৯০০ নিয়েছে। বাড়তি ভাড়ার কারণে গতকাল বাস বন্ধ ছিল। এরপরও আজ সেই বাড়তি ভাড়াই নিয়েছে। কাল থেকে অফিস খোলা। আজ না গেলে সমস্যায় পড়তে হবে। সেজন্য অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই এসেছি।
বাসে রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন ব্যবসায়ী নাসির হোসেন। তিনি বলেন, রামগঞ্জ থেকে হাজীগঞ্জ আসার ভাড়া ৩৫০ টাকা। আল আরাফাহ বাস সকল যাত্রীদের থেকে নিয়েছে ৫০০ টাকা। হাজীগঞ্জ থেকে ঢাকার ভাড়া বেশি নেয়নি। তবে যাওয়ার সময় সুরমা এক্সপ্রেস বাস ২৫০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা নিয়েছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালের সেন্টমার্টিন সি ভিউ এক্সপ্রেস বাসের কাউন্টার মাস্টার মো. হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের গাড়ি পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নীলফামারী এসব এলাকা থেকে আসে। তো ওখান থেকে আসতে আমাদের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। গড়ে মোটামুটি ৫ ঘণ্টা করে বেশি সময় লাগছে ঢাকায় আসতে। যে গাড়িটা সকাল ৬টায় পৌঁছানোর কথা সেটা আসছে সাড়ে ১১টায় ১২টায়। যমুনা সেতুতে এই সময়টা লাগছে। এছাড়া বাইপাইল, ইপিজেড এসব জায়গায়ও থেমে থাকছে।
তিনি আরও বলেন, আবার দক্ষিণাঞ্চল থেকে যে গাড়িগুলো আসছে সেগুলোও ৪-৫ ঘণ্টা দেরিতে আসছে। এগুলো রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় জ্যাম আর হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় এসে আটকে যায়।