সংগৃহীতখবর ://বাংলাদেশের ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। তাতে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বিত্তশালীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি রয়েছে এমন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সংখ্যা তিন মাসে ৪ হাজার ৯৫৪টি বেড়েছে। বর্তমানে এমন মোট হিসাব আছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি।খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারী অর্থপাচার করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকে টাকা জমা করছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৫৫টি। এসব হিসাবে জমা ছিল ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে ব্যাংক খাতের হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ২৭৭টি। আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে— এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি, যা তিন মাস আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। সেই হিসেবে তিন মাসে কোটি টাকার উপরে হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৯৫৪টি। এর আগে গত বছরের জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি।
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অর্থ পাচার কমেছে অন্যদিকে উচ্চ মুনাফার অর্থ ব্যাংকে রাখছে। এর ফলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে— এমনটাই মনে করছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের শেষ দিকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে ছিল। ঐ সময় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। একই সময় অন্তর্বর্তী সরকার অর্থপাচার রোধে কঠোর অবস্থান নেয়। ফলে এখন দুর্নীতিবাজ এবং লুটপাটকারীরা অর্থ পাচার করতে পারছে না। যার কারণে বিভিন্ন উপায়ে তারা ব্যাংকে টাকা জমা করছে। পাশাপাশি গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থার চিত্র প্রকাশ পায়। তাতে অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। এখন আবার পরিস্থিতি বুঝে ফের ব্যাংকে অর্থ জমা করছে। ফলে সার্বিকভাবে আমানত বেড়েছে।