ঢাকা | বঙ্গাব্দ

২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত

  • আপলোড তারিখঃ 11-07-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 136534 জন
২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায়  আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত ছবির ক্যাপশন: ১

মোঃমনিরহোসেন ://

বাংলাদেশে অ্যাননটেক্সের ঋণ জালিয়াতি করে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় অর্থনীতিবিদ এবং জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

আজ শুক্রবার ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আবুল বারাকাতকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।

দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে আদালতে হাজির করে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ২টা ৫০ মিনিটের দিকে এজলাসে তোলা হয়। সেখানে অধ্যাপক আবুল বারকাতকে আদালতের বেঞ্চে বসানো হয়। তার পাশে তার মেয়েসহ স্বজনরা বসেন। তিনি নাতিকে কোলে নেন এবং তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপচারিতা করেন। ৩টা ৩৫ মিনিটে আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়। 

দুদক প্রসিকিউটর রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, ‘২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা। তদন্ত কর্মকর্তা তার তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’

আবুল বারকাতের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল আউয়াল রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদনের শুনানিতে বলেন, ‘তিনি বয়স্ক, অসুস্থ একজন মানুষ। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আর যে বিষয়ে মামলা, সেটা ২০২২ সালেই সেটেলমেন্ট হয়ে গেছে। এ বছর আবার সেই বিষয়ে মামলা। সেটেল ম্যাটার। রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।’ পাশাপাশি আবুল বারকাতের ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন তিনি।

এরপর দুদক প্রসিকিউটর আদালতকে মেনশন করেন, জামিন ও রিমান্ড শুনানির এখতিয়ার এই আদালতের নেয়। মেট্রোসেশন স্পেশাল জজ কোর্টে হয়।

এই সময় বিচারক জানতে চান, এখানে আসলেন কেন? তবে এর তেমন সদুত্তর দিতে পারেননি দুদক প্রসিকিউটর। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জামিন এবং  রিমান্ড শুনানির এখতিয়ার এই আদালতের নেই, তাহলে কেন শুনানি করলেন জানতে চাইলে দুদক প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আদালত স্বপ্রোণোদিতভাবে হয়ে এই আদেশ দেবেন। কিন্তু যখন আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন আদালতকে মেনশন করেছি। আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মেট্রোসেশন স্পেশাল জজ কোর্টে পরবর্তীতে রিমান্ড এবং জামিনের বিষয়ে শুনানি হবে।’

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মামলাটি অর্থ আত্মসাৎ এবং জাল-জালিয়াতির বিষয়াধীন। এরসঙ্গে আর কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তা উদ্‌ঘাটনের কারণে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ধানমণ্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসা থেকে অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

জনতা ব্যাংকে অ্যাননটেক্সের ঋণ জালিয়াতি করে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১ এই মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন। এজাহারে ঘটনার সময়কাল হিসেবে দেখানো হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন এবং  পরিচালক মো. আবু তালহা; জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক এবং  মহাব্যবস্থাপক (পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও) আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ব্যবস্থাপক (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, এসএমই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. গোলাম ফারুক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, এফসিএ মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, মিসেস সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ।

আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং  ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।

এজাহারে বলা হয়, ব্যাংকে বন্ধক রাখা জমির মালিক হওয়ার আগেই ঋণ গ্রহীতা নিজের বলে এবং স্থাপনা দেখিয়ে ব্যাংকে বন্ধক রাখে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ‘প্রতারণা, মিথ্যা নথি তৈরি, জালিয়াতির’ মাধ্যমে জমিতে বাস্তবে কোনো স্থাপনা বা কারখানা না থাকা সত্ত্বেও মূল্যায়ন করে।

স্থাপনাবিহীন ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় কেনা জমিকে ১৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা মূল্যায়ন করা (অতি মূল্যায়ন) হয়। এর মাধ্যামে ঋণ অনুমোদন, বিতরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন আসামিরা।

মামলার এজাহারে জড়িতদের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, মামলার এক নম্বর আসামি মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনকে জমি ও স্থাপনার মূল্য বাড়িয়ে দেখাতে সহায়তা করেছেন অন্য ২০ আসামি।

মামলার দুই নম্বর আসামি মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিংয়ের পরিচালক মো. আবু তালহা কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ওই কোম্পানির আয়ব্যয়, ভালো-মন্দের সুবিধাভোগী। তার জ্ঞাতসারে এবং সম্মতিতে ‘মিথ্যা নথি ব্যবহার ও জালিয়াতি’ করে জনতা ব্যাংকের টাকা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন। তাতে সহায়তা করেছেন ওই আসামিরা। 


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ মোঃ মনির

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনতে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপারের লংগদু ও বাঘাইছড়ি সার্কেল অফিস পরিদর্শন