আফজাল হোসেন জয় //বান্দরবান প্রতিনিধি।
একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ কয়েক জন ধর্ষণকারী ও ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা রাখতে তথাকথিত সামাজিক সালিশি বিচার আয়োজকদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বান্দরবানের রুমায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রুমার মার্মা যুব সমাজের ব্যানারে আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগষ্ট) সকাল সাড়ে দশটার দিকে রুমা বাজারের কেন্দ্রীয় মন্দির মার্কেটের সামনে এই বিক্ষোভ মিছিল, মানব বন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মার্মা যুবনেতা মং হাই নু মার্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নারী নেত্রী রেম এং ময় বম, রুমা প্রেস ক্লাবের সভাপতি শৈহ্লাচিং মার্মা, ত্রিপুরা যুব সমাজের যুব নেতা রিপন ত্রিপুরা ও নারী নেত্রী ড ওয়াইনু মার্মা। সমাবেশটি পরিচনা করেন অংচোওয়াং মার্মা।
বক্তারা বলেন, শিশু নির্যাতন ও নারীর ধর্ষণের মত জঘন্যতম অপরাধ করার পরও আইনের হাতে তুলে দেইনি তথাকথিত সমাজের নেতারা। বেআইনি ভাবে সামাজিক সালিশে বিচার বসিয়ে বাকিতে জরিমানা করিয়ে দেয়ার অজুহাত দেখিয়ে ধর্ষণকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সহযোগিতা করেছে এ সামাজিক নেতারা।
বক্তারা আরো বলেন, পলাতক ধর্ষণকারী আরো দুই জনকেও দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জঘন্যতম ধর্ষণের ঘটনাকে প্রভাব খাঁটিয়ে ধামাচাপা রেখে সালিশি বিচারে আয়োজনকারী এবং ধর্ষণকারী উভয়ে সমান অপরাধে অপরাধী। তাই ২জন পলাতক ধর্ষণকারী ও সালিশি বিচারে আয়োজক কথিত সামাজিক নেতা মেম্বার গংবাসে মার্মা, পাইন্দু মৌজার হেডম্যান মংচউ মার্মা ও পাইন্দু হেডম্যান পাড়া কারবারি থোয়াই সা মার্মাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে তাদের সুবিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়,বান্দরবানের রুমায় পাইন্দু ইউনিয়নের পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায় সংঘটিত দলবদ্ধ ৫ জন কর্তৃক স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ১৮ আগস্ট সকালে পাড়ার কারবারী থোয়াই সা মার্মার বাড়িতে এক সামাজিক বিচার অনুষ্ঠিত হয়। ওই সালিশি বিচারে বাকিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দন্ড দেওয়া অজুহাত দেখিয়ে অভিযুক্ত ধর্ষণকারীদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের অভিযোগে সামাজিক সালিশি বিচারে নেতৃত্ব দেন পাইন্দু ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের তিন তিন বার নির্বাচিত মেম্বার, পাইন্দু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গংবাসে মার্মা ও পাইন্দু মৌজার হেডম্যান মংচউ মার্মা গং।
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উঠে আসলে এলাকায় চরম ক্ষোভ, অসন্তোষের ঝড় ও উত্তেজনাযর সুষ্টব হয়। পরদিন ১৯ আগস্ট পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত ক্যসাইওয়াং মার্মা ক্যহ্লাওয়াং মার্মা ও উহাইসিং মার্মা এই ৩ ধর্ষণকারীকে আটক করে। পরে রুমা থানায় অভিযুক্ত ধর্ষণকারী ৫ জনের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে এজহারভুক্ত আসামী দেখানো হয়।
মেম্বার গংবাসে মার্মা এর ভাষ্যমতে, সামাজিক সালিশি বিচারের বক্তব্য অনুযায়ী ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে প্রথমে ধর্ষণ করে পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা রাংমেশে মার্মা ছেলে শৈহাইনু মার্মা। বন্ধুরা তার মাধ্যমে জানার পর থোয়াইনু চিং মার্মা এর ছেলে উহাইসিং মার্মা, রাংমেশে মার্মার ছেলে ক্যহ্লাওয়াং মার্মা, ক্যহ্লচিং এর ছেলে ক্য ওয়াং মার্মা ও মৃত সাচিংউ এর ছেলে চহাই মার্মা ও আহ্লামং এর ছেলে ক্যসাইওয়াং মার্মা পালাক্রমে সুযোগ বুঝে তারাও ধর্ষণ করে। ধর্ষণের অভিযুক্ত ৫ জনই পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা।
পরে ভুক্তভোগী বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। এতে সবার মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। সালিসি বিচারে আয়োজনের অভিযোগ বিষয়ে গংবাসে মার্মা বলেন, ভুক্তভোগী অভিভাবক ও পাড়াবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তারা এ সামাজিক সালিশি বিচারে মিলিত হয়েছিলেন।
ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ বিষয়ে জানতে চাইলে রুমা থানা অফিসার ইনচার্জ বলেন, সালিশি বিচার আয়োজনকারীদের বিষয় নিয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।