মোঃ কামরুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি:-
ভোরের আলো তখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি। পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা কুয়াশা নরম–সাদা চাদরের মতো ভেসে আছে। রাজবন বিহারের চত্বরে প্রবেশ করতেই শান্ত এক ঘন্টার শব্দ ভেসে আসে। সেই নীরবতার মধ্যেই ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান—হাতে ফুল, মনজুড়ে প্রার্থনা।
শনিবার সকাল ৮টা। বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্যের প্রত্যাশায় তিনি এসেছেন রাঙামাটির এই প্রাচীন বিহারে। কৃতজ্ঞতা আর দায়িত্ববোধের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে—কারণ কয়েকদিন আগেই তিনি পেয়েছেন রাঙ্গামাটি (২৯৯) আসনে বিএনপির মনোনয়ন।
শান্ত প্রার্থনার ভিতরে রাজনৈতিক আবেগ
বিহারের ভেতরে তখন ভিক্ষুদের মন্ত্রোচ্চারণে ভরে গেছে বাতাস। দীপেন দেওয়ান বসে পড়লেন মেঝেতে। তাঁর সামনে সাজানো হলো সংগ্রহ করা অষ্ট পরিষ্কার দান, ফলমূল আর পুষ্প। মুহূর্তটা যেন রাজনীতির বাইরে গিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত প্রার্থনায় ডুবে থাকা একজন মানুষের।
অধিষ্ঠান গ্রহণ করলেন রাজবন বিহারের আবাসিক অধ্যক্ষ প্রজ্ঞালংকার মহাথেরু। প্রার্থনার সময় ভিক্ষুরা উচ্চারণ করলেন দোয়া—বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং শান্তির কামনা।
চারদিকে শোনা যাচ্ছিল কেবল ঘন্টার মৃদু ধ্বনি আর পাহাড়ি বাতাসে পাতার হালকা শব্দ।
পরিবার–সহযাত্রী–নেতারা: পাহাড়ি শহরের এক বিরল সমাবেশ
দীপেন দেওয়ান শুধু রাজনীতিক নন—রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম জেলা জজ এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। তাই তাঁর এই প্রার্থনার আয়োজনে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনের বহু পরিচিত মুখও সেদিন একত্রিত হয়।
উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক দেবোজ্যোতি চাকমা
জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি মানস মুকুর চাকমা,
সোনালী ব্যাংক পিএলসি কেন্দ্রীয় জিয়া পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র চাকমা,
রাঙামাটি সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রনেল দেওয়ান,
জেলা বিএনপির সহ–ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও নানিয়ারচরের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রনো বিকাশ চাকমা,
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাহুল চাকমা
তাঁদের অনেকে জানালেন—দেশনেত্রীর অসুস্থতার খবর পাহাড়েও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। তাই এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তাৎপর্য তাঁদের কাছে শুধু রাজনৈতিক আনুগত্য নয়, বরং মানবিক এক দায়িত্ব।
নীরবতার ভেতর একটি কামনা
অনুষ্ঠান শেষে বিহারের সিঁড়িতে থামলেন দীপেন দেওয়ান। নিচে দূরে কাপ্তাই হ্রদের দিকে তাকিয়ে বললেন ধীরে,
দেশনেত্রীর দ্রুত সুস্থতার চেয়ে বড় কামনা আর কিছু নেই। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে দেশও উপকৃত হবে।
পাহাড়ি রোদ তখন ধীরে ধীরে তেজ বাড়াচ্ছে। বিহারের উঠান খালি হয়ে যাচ্ছে একে একে। কিন্তু সেই প্রার্থনার শব্দ, রোগমুক্তির কামনা—রয়ে যায় পাহাড়ের নীরবতায়, মন্ত্রপাঠের মতোই দীর্ঘস্থায়ী হয়ে।