নিজস্ব প্রতিবেদ ://দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ দেশের ছাত্র-জনতা। তাকে পদচ্যুত করাসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বঙ্গভবন ঘেরাওসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলায় বিক্ষোভ করেছে ছাত্ররা। রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতারা রাষ্ট্রপতির তীব্র সমালোচনা করলেও তার পদত্যাগ কিংবা অপসারণের দাবির প্রশ্নে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
কিন্তু জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গত ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেছেন। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এর আগে গত ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
দেশের এই অবস্থায় আইন ও সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ আছে কিনা, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করার পর রাষ্ট্রপতি কার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিবেন বা প্রক্রিয়া কী হবে?
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনের শিক্ষকরা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ‘আইন এবং সংবিধানের’ বিষয়টিই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফলে ‘জনআকাঙ্ক্ষার’ আলোকে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে অন্য কাউকে সে পদে বসাতে চাইলে সেটি অসম্ভব কিছু নয়। যদিও সরকার পরিবর্তনের পর দেশের সংবিধান স্থগিত করা হয়নি।
এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি এসব নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রক্রিয়া কী হবে এবং পদত্যাগ করলে কার কাছে জমা দিবেন এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই জটিল। তবে সময়ের আলোকে সম্পূর্ণ পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। তার পদত্যাগের বিষয়ে সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় চলে গেলে সাংবিধানিক কোনো সমস্যা নেই। স্পিকার যেহেতু নেই, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র কার কাছে দিবেন? পদত্যাগপত্র দিতে হলে প্রধান উপদেষ্টাকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দিবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর সব কিছুই বাতিল করা যেতো কিন্তু তা না করে কোনোটি বাদ দেয়া হয়েছে আবার কোনোটি রাখা হয়েছে বলেই এই জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সংবিধান তো আছে, স্থগিত করা হয়নি। কিন্তু আবার সেটি পুরোপুরি অনুসরণও করা হচ্ছে না।রাষ্ট্রপতিকে দুইভাবে সরানো যায় উল্লেখ করে হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘একটি হলো অভিসংশন করলে বা বাদ দিলে, আরেকটি হলো স্পিকারের মাধ্যমে সংসদে। কিন্তু স্পিকার তো নেই। তাই সাংবিধানিক শূন্যতা হবে। এখন হয়তো কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে তো আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা উঠতে পারে। নিয়ম মেনে করলে সব কিছুই করা যেত। কিন্তু পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল হলেই তো অনেকে প্রশ্ন তুলবে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম এখন সংবাদ ২৪ কে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করে স্পিকারের কাছে জমা দিবেন। যদিও স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। এখানে দুটো আর্টিক্যাল জরুরি, আর্টিক্যাল সেভেনটি ফোর সাব আর্টিক্যাল সিক্স, তার সঙ্গে পড়তে হবে আর্টিক্যাল ফিফটি ফোর।