শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট বিকেলে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরশহরে বিক্ষুব্ধ ও উল্লসিত ছাত্র-জনতা থানা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ভবনে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর করে। ওসির বাসায় আগুন দেওয়ার সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তিনজন, আহত হন অন্তত ৬০ জন।
ঘটনার ১৫ দিন পর ২০ আগস্ট বিয়ানীবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় ৯ প্রবাসী, ছয় সাংবাদিক, আওয়ামী লীগের ৭৫ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। স্থানীয়রা এর তীব্র সমালোচনা করছেন।
দুই দিন ধরে ফেসবুকে মামলার এজাহার ভাইরাল হলে এজাহারভুক্ত আসামির তালিকা দেখে অনেকে হতবাক। মামলার বাদী দেখানো হয়েছে নিহত তারেক আহমদের (২৪) মা ইনারুন নেছাকে। তিনি বলেন, ‘আসামিরা আমার পূর্বপরিচিত। তারা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। একদল লোক এসে আমার মৃত ছেলের জন্য সাহায্যের নাম করে সাদা কাগজে দস্তখত নিয়ে এ মামলা করে। আমি এই মামলা পরিচালনা করব না।
গত বৃহস্পতিবার সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইনারুন নেছা এ নিয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই বিয়ানীবাজার পৌরশহরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শত শত নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতা উল্লাসে মেতে ওঠেন। তারা শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। তাদের মিছিলে বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগ দেন স্থানীয় জনতা। শহরে হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার অফিস ও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বিকেলে বিয়ানীবাজার থানায় হামলা চালায় স্থানীয় জনতা। থানার প্রবেশ ফটকের তালা ভেঙে থানা চত্বরে শত শত জনতার উপস্থিতিতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, থানার ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ মালপত্র লুট করা হয়। এক পর্যায়ে থানা থেকে চালানো গুলিতে ৬০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এর মধ্যে তারেক আহমদসহ তিনজন মারা যান।
তারেকের মায়ের কথিত মামলায় উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব ও সদ্য সাবেক পৌরসভার মেয়র ফারুকুল হক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে প্রচার সম্পাদক আব্বাছ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতাদের প্রায় সবাইকে আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় থাকা অন্তত ৯ জন দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে বসবাস করছেন। এর মধ্যে সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস শুকুর ও ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান মিন্টু যুক্তরাজ্যে, ফয়সল আহমদ ও ইকবাল হোসেন তারেক যুক্তরাষ্ট্রে, সাগর দাস ফ্রান্সে, কনক কান্তি ইতালিতে, হুমায়ূন কবির, আরবাব হোসেন খান ও কামরুল হক কানাডায় অবস্থান করছেন। তালিকায় বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের একাংশের সভাপতি সজীব ভট্টাচার্যসহ স্থানীয় সাংবাদিকও রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে বিয়ানীবাজার থানার ওসি দেব দুলাল ধরকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। থানায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। অন্য কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।সূত্র টি সমকাল পত্রিকা।