ঢাকা | বঙ্গাব্দ

​টাইফয়েড আতঙ্ক দূর করবে টিকা: ৮ হাজার শিশুর জীবন রক্ষায় সরকারের বিশাল উদ্যোগ

  • আপলোড তারিখঃ 09-10-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 18325 জন
​টাইফয়েড আতঙ্ক দূর করবে টিকা: ৮ হাজার শিশুর জীবন রক্ষায় সরকারের বিশাল উদ্যোগ ছবির ক্যাপশন: ১


​মোঃ কামরুল ইসলাম, রাংগামাটি জেলা প্রতিনিধি:-

​ দূষিত জল ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ানো টাইফয়েড জ্বর দেশের জনস্বাস্থ্যকে দীর্ঘদিন ধরে চ্যালেঞ্জ জানালেও, এবার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপে এই রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষার ঢাল হাতে নিয়েছে সরকার। আগামী ১২ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)-এর আওতায় এই প্রথম ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি (বিভিন্ন অঞ্চলের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অনুমান) শিশুকে বিনামূল্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) প্রদান করা হবে।

​স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টাইফয়েডের ভয়াবহতা এবং এর কারণে শিশুমৃত্যুর উচ্চ হার বিবেচনা করেই এই বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নেওয়া হয়েছে।

​টাইফয়েড: ৮ হাজার মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে থাকা নীরব ঘাতক

​টাইফয়েড জ্বর বাংলাদেশে সংক্রমণজনিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান। স্যালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট এই রোগ মূলত অপরিষ্কার পরিবেশ, নিরাপদ পানির অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর উপায়ে খাবার তৈরি বা পরিবেশনের মাধ্যমেই ছড়ায়। এই রোগ কেবল সাময়িক উচ্চ জ্বর নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।

​দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (GBD) স্টাডি-২০২১-এর তথ্যমতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৮,০০০ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই ছিল শিশু। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, টাইফয়েড এদেশের শিশু-কিশোরদের জন্য কতটা মারাত্মক হুমকি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং বস্তি বা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়।

​ভ্যাকসিনেই ভরসা: টিসিভি কেন জরুরি?

​টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরীক্ষিত ও সুপারিশকৃত একটি নিরাপদ ও কার্যকর টিকা। এটি কেবল সাধারণ টাইফয়েডই নয়, দিন দিন বেড়ে চলা ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড (Drug-Resistant Typhoid)-এর বিস্তার রোধেও অত্যন্ত কার্যকর। পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ শিশু এই টিকা গ্রহণ করেছে এবং সুফল পাওয়া গেছে।

​স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, টাইফয়েড একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। আমাদের শিশুদের সুরক্ষায় এই টিকাদান কর্মসূচি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। বিশেষ করে, বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী টাইফয়েড যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, সেখানে টিসিভি টিকাটি একটি অপরিহার্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

​যাদের টিকা দেওয়া হবে:

​শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণি/সমমান পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রী।

​শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কমিউনিটির ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি সকল শিশু।

​টিকাদান প্রক্রিয়া ও কেন্দ্রে উপস্থিতি

​এই ক্যাম্পেইনটি দুই ধাপে পরিচালিত হবে: প্রথমত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত শিশুদের জন্য স্থায়ী ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে।

​রেজিস্ট্রেশন এবং করণীয়:

​টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে উদ্দিষ্ট সকল শিক্ষার্থী ও শিশুদের ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

​শিক্ষার্থী বা শিশুর অভিভাবকেরা নিবন্ধন সম্পন্ন করে টিকাদান কার্ড ডাউনলোড করে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবেন।

​যাদের ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নেই, বা ১৫ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীরা (যারা ৯ম শ্রেণিতে পড়ে), তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাস্থ্য সহকারী বা টিকাদানকর্মীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে টিকা নিশ্চিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

​টিকা গ্রহণের পূর্বে সকালে হালকা নাস্তা খেয়ে আসতে হবে এবং টিকা নেওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট টিকাদান কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে।

​সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে টাইফয়েড টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে পরিবার ও প্রতিবেশীদের জানাতে এবং নির্দিষ্ট দিনে টিকা নিতে কেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এই ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচি সফল করার মাধ্যমে বাংলাদেশ শিশুমৃত্যুর হার কমাতে এবং একটি সুস্থ প্রজন্ম গড়তে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে, এমনটাই আশা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ মোঃ মনির

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনতে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপারের লংগদু ও বাঘাইছড়ি সার্কেল অফিস পরিদর্শন