মোঃ কামরুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি:-
রাঙামাটি জেলা সংবাদদাতা: ২৯৯ নং রাঙামাটি সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, জেলা বিএনপির সাবেক সফল সভাপতি, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম জেলা জজ ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান মহোদয়ের সাথে শিক্ষা সংস্কার বিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় শিক্ষক প্রতিনিধিরা শিক্ষাব্যবস্থার নানা গুরুতর সমস্যা তুলে ধরেন এবং এর সমাধানে নির্বাচনে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি মাইনুদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শিবলী শান্তি চাকমার প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ইকরামুল ইসলাম বেলাল সহ বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকদের কণ্ঠে সমস্যার চিত্র ও আশার বাণী
সভায় শিক্ষকদের বক্তব্যে উঠে আসে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার মূল প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জগুলো। শিক্ষকরা জানান, পাহাড়ের দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থান, সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা এবং শিক্ষকদের অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার কারণে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়সিম বড়ুয়া তাঁর বক্তব্যে পরিস্থিতিটির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা সহ সকল সমস্যার সমাধান হলো ধানের শীষে ভোট প্রদান করে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা। তাঁর এই স্পষ্ট উচ্চারণ শিক্ষক সমাজের মধ্যে বিরাজমান হতাশা ও একইসাথে পরিবর্তনের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষাকেই প্রতিফলিত করে।
অন্যদিকে, জীবতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়সাল আহমেদ পার্বত্য জেলার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট ও জরুরি দুটি দাবি উত্থাপন করেন।
পাহাড়ের পরিবেশ, সংস্কৃতি ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে অবিলম্বে একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএড ও এমএড কলেজ স্থাপন: শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা ও মানোন্নয়নের জন্য দ্রুত একটি বিএড (B.Ed) ও এমএড (M.Ed) কলেজ স্থাপন করা অপরিহার্য। এর ফলে স্থানীয় শিক্ষকরা উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন, যা সরাসরি শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে সহায়ক হবে।
দীপেন দেওয়ানের অঙ্গীকার: অবহেলিত শিক্ষকরাই মূল স্তম্ভ, প্রধান অতিথি হিসেবে অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান শিক্ষকদের উত্থাপিত সমস্যা ও দাবিগুলোর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং মনোযোগ সহকারে শোনেন। তিনি শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোতে মাধ্যমিক শিক্ষকরাই হলো জ্ঞান বিতরণের মূল স্তম্ভ। কিন্তু এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আরও বলেন,
আমি নির্বাচিত হলে অবশ্যই শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবো, শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবো এবং আপনাদের দাবিগুলো পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাব। এটা আমি শপথ করে বলতে পারি।
তাঁর এই জোরালো অঙ্গীকার উপস্থিত শিক্ষক সমাজে বিপুল আশার সঞ্চার করেছে।
এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দীপেন দেওয়ান মহোদয়ের স্ত্রী ও সাবেক শিক্ষক এবং ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী মিসেস মৈত্রী চাকমা, যিনি একজন সাবেক শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকদের সমস্যাগুলো ভালোভাবে অনুধাবন করে প্রার্থীর প্রতিশ্রুতিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন।
এই মতবিনিময় সভাটি কেবল একটি প্রথাগত নির্বাচনী প্রচারের অংশ ছিল না; এটি রাঙামাটির প্রান্তিক শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যাগুলোকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে। শিক্ষকরা এখন তাদের দাবি পূরণের জন্য একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করছেন। অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ানের শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গীকার, এই অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা ও হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন।